মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
শিক্ষার্থীদের প্রায় ঘণ্টাব্যাপী প্রখর রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবসে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া ইসরাইল আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিও গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বা মাঠে দাঁড় করানো নিষেধ।
সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও নানা অভিযোগে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানকে অর্ভ্যথনা জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব পরিদর্শন ও জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি হাতে নেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান। সোমবার বিকেলে ডিজিটাল ল্যাব পরিদর্শন, আলোচনাসভা ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরেই হাজির করানো হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা প্রখর রোদে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মুরাদ হাসান মাঠে উপস্থিত হন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুরাদ হাসান তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের গেটে নামেন। এ সময় তাঁর সমর্থকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানায়। বিদ্যালয়ের ভবন থেকে গেট পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে আগে থেকেই দাঁড়ানো ছাত্রছাত্রীরা হাততালি দিতে থাকে। দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝখান দিয়ে হেঁটে প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়া নাজমুল ইসলাম বাঁধনসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানকে স্বাগত জানাতে তারা সব ছাত্রছাত্রীই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা তাদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন, না মেনে উপায় ছিল না।
এ ব্যাপারে পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক জানান, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ বাচ্চু ও সদস্য বাবু শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়েছিলেন বলে শুনেছি। এটি নিয়মবহির্ভূত ও দুঃখজনক।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ মাহমুদ জানান, শোক দিবস উপলক্ষে মতিয়র রহমান তালুকদার স্মৃতি সংসদ বিদ্যালয়ে দুস্থদের জন্য খাবার বিতরণের আয়োজন করে। এমপি মহোদয় বিকেলের দিকে অনুষ্ঠানে আসেন। শিক্ষার্থীদের দুপুর থেকেই উপস্থিত করা হয়।
শিক্ষার্থীরা এমপিকে ফুল ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানায়নি, শুধু মাঠে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। এটি কোনো অপরাধ নয় বলে দাবি করেন ইসরাইল আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুরুজ্জামান।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ বাচ্চু অভিযোগ অস্বীকার করে কালের খবরকে জানান, শিক্ষার্থীদের মাঠে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়নি। প্রধান অতিথি বিদ্যালয়ে আসার কথা জানতে পেরে তারা দৌড়ে মাঠে লাইনে দাঁড়ায়। প্রধান অতিথি দেখে তাদের সরে যেতে বললে শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে চলে যায়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বা মাঠে দাঁড় করানো আইনগতভাবেই নিষেধ। প্রধান অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর সঙ্গে শোক দিবসের তাৎপর্যের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।